ভৌগোলিক দিক থেকে বিচার করলে আরবের মতন সব দেশেই চাঁদ দেখার সম্ভাবনা প্রায় সমান ।
আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে বলতে হয় আরবের এবং তার আশপাশের দেশগুলো যে অক্ষাংশ
রখায় অবস্তিত ওই অক্ষাংশ বারাবার যে কোন দেশের চাঁদ দেখার সম্ভাবনা সমান । তবে
হ্যাঁ, জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভারতের থেকে সৌদি আরবের চাঁদ দেখার সম্ভাবনা
একটু বেশি ।
![]() |
আরব কেন নতুন চাঁদ আগে দেখে |
পক্ষান্তরে আরবের থেকে আফ্রিকা মহাদেশের চাঁদ দেখার সম্ভাবনা আরো বেশি
এবং আফ্রিকার থেকে আমেরিকার চাঁদ দেখার সম্ভাবনা আরো বেশি । এটাই হচ্ছে ভৌগোলিক
নিয়ম ।
অর্থাৎ দুটি পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রে আপেক্ষিক ভাবে যে দেশটি পশ্চিমে
অবস্থান করবে তার নতুন চাঁদ দেখার সম্ভাবনা তত বেশি । যদি ভারত ও সৌদি আরবের চাঁদ
দেখার সম্ভাবনার তুলনামূলক বিচার করি তাহলে তার হিসাব টা হবে এইরকম হবে । ভারতের
প্রমাণ সময় ধরা হয় এলাহাবাদের দ্রাঘিমা রেখাকে যার মান 82.5° E অপরদিকে সৌদি
আরবের রাজধানী রিয়াদকে ধরা হয় প্রমাণ সময় হিসেবে যার দ্রাঘিমারেখার মান প্রায়
45.0° E এক্ষেত্রে এলাহাবাদ এবং রিয়াদের মধ্যকার সময়ের পার্থক্য প্রায় 37.5°
সুতরাং উভয় স্থান দুটির মধ্যে সময়ের পার্থক্য ( 37.4 × 4 ) = 150 মিনিট অর্থাত
আড়াই ঘণ্টা । এখন দেখা যাক অ্যাস্ট্রোনমিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে ভারতের থেকে
সৌদি আরবে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা কত বেশি ? যদি উচ্চতার কথা না ধরি তাহলে সারা
পৃথিবীতে যেকোনো স্থানের চাঁদ দেখার সম্ভাবনা সমান । অমাবস্যার পর একবার নতুন চাঁদ
উদয় হলে সেই চাঁদ আর কখনোই অস্তমিত হয় না বরং প্রাকৃতিক কারণে অর্থাৎ মেঘের কারণে
হয়তো সাময়িক ভাবে ঢাকা থাকে অন্যথায় চাঁদ কখনোই অস্তমিত হয় না । হয়তো এটা হতে
পারে যে, যে জায়গায় চাঁদ দেখা গেল তার পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখার হলেও অনেক সময় ওই
চাঁদকে দেখা যাবে না যেমনটা সূর্যের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে । সূর্যের ক্ষেত্রে যেমন
পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের ৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত্রি দেখা দেয় । ঠিক তদ্রুপ
চাঁদের ক্ষেত্রে ও পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দুই সপ্তাহ চাঁদ দেখা দিবে অথবা
দুই সপ্তাহ চাঁদ দেখা দিবে না । এটাই স্বাভাবিক । অর্থাৎ পৃথিবীর কোন জায়গায় নতুন
চাঁদ দেখা দিলে তার পশ্চিমের সকল দেশের সকল স্থান থেকে চাঁদ দেখা দেবে এমন কোন কথা
নয় । তবে সাধারণ নিয়ম হল কোন স্থানে নতুন চাঁদ দেখা দিলে তার পশ্চিমে সকল দেশেই
চান দেখা দিবে উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যদি বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যায় তাহলে ভারত
অবশ্যই চাঁদ দেখবে কিংবা যদি ভারতে চাঁদ দেখা যায় তাহলে সৌদি আরব অবশ্যই চাঁদ
দেখবে সৌদি আরব ভারত উপমহাদেশের পশ্চিমে অবস্থিত হওয়ায় প্রায় আড়াই ঘন্টার সময়
বেশি পায় যার জন্য চাঁদ দেখার সম্ভাবনা একটু বেশি হয়ে যায় । আর এখান থেকেই খুব
সহজেই নির্ণয় করা যায় ভারতের থেকে আরবে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা কত বেশি । ভারত এবং
সৌদি আরবের দ্রাঘিমা পার্থক্য 37.5° । সুতরাং ভারতের থেকে সৌদি আরবের চাঁদ দেখার
সম্ভাবনা মাত্র 37.5/360 = 0.104 অংশ =104/1000 অর্থাৎ প্রায় 1/10 অংশ মাত্র । আর
আমি আমার বাস্তব জীবনে দেখেছি যে, এই পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোন দিনই আরবের এবং
পশ্চিমবঙ্গের একই দিনে চাঁদ দেখা গেছে এমনটি হয়নি । তাহলে দেখা যাচ্ছে যে আরবের
নতুন চাঁদ প্রথম দেখার মূল কারণ গুলি হল এই যে, 1. সৌদি আরবে প্রথম নতুন চাঁদ দেখার
মূল কারণ ওখানে উন্নত মানের টেলিস্কোপ ব্যবহার করা হয় এবং গুরুত্ব সহকারে নতুন
চাঁদের খোঁজ করা হয় । যেটা ভারত উপমহাদেশ থেকে সেরকম ভাবে দেখা হয় না । 2.
তুলনামূলকভাবে ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে আরব ভূখণ্ডের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ
কিছুটা বেশি হয় তাই নতুন চাঁদ দেখার সম্ভাবনা একটু বেশি I 3. আরেকটি কারণ হচ্ছে যে
ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে আরব ভূখণ্ডের আবহাওয়া অনেকটা পরিষ্কার তাই ওখানে চাঁদ দেখার
সম্ভাবনা একটু বেশি । 4. আর চতুর্থ নাম্বার কারণটা আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে ভৌগলিক
কারণে আরবে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা প্রায় 1/10 অংশ । গাণিতিকভাবে বিষয়টা উল্লেখ করলে
দেখতে পাবো এইরকম 》 7/10 + 1/10 + 1/10 + 1/10 = 10/10 = 1 = 16/16 বর্তমান
পরিস্থিতি এমন যে মোটের উপর সব মিলিয়ে ভারত ভূখণ্ড তুলনায় আরব ভূখণ্ডে নতুন চাঁদ
দেখার সম্ভাবনা ষোল আনাই পূর্ণ অর্থাৎ ভারত ভূখণ্ড থেকে কখনোই আরবের থেকে আগে চাঁদ
দেখতে পাওয়া সম্ভব না । অর্থাৎ আমার গবেষণায় ভারত উপমহাদেশের তুলনায় আরব দুনিয়ায়
প্রথম নতুন চাঁদ দেখার মূল কারণ হল আধুনিক টেলিস্কোপ ব্যবহার করা । যার গাণিতিক মান
দিয়েছি 07/10 অংশ । অর্থাত ষোল আনার 11.2 অংশ ।
![]() |
আরবেই কেন নতুন চাঁদ প্রথম দেখা যায় ? |
সুতরাং আমরা যদি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারি তবে সারা বিশ্বে 24 ঘন্টার মধ্যেই ঈদ উৎসব পালিত হবে ।
إن شاء الله
ইসলাম ও সঠিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে
অ্যাস্ট্রোনমির সঠিক রুপরেখা জানতে হলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত ।
0 মন্তব্যসমূহ