নামাজের মতই সিয়াম ও ঈদ উৎসব পালিত হবে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই


নামাজের মতই সিয়াম ও ঈদ উৎসব পালিত হবে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই। এটাই স্বাভাবিক এবং  সর্বাধিক উত্তম পন্থা এতে কোন সন্দেহ নেই কারণ এই  International Hijri date line  কোরআন  হাদিস ও বিজ্ঞান সম্মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাত্র  ।

আন্তর্জাতিক হিজরী বা আরবী তারিখরেখা 
    আরবি তারিখ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের মতামত পাওয়া যায় ।  তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হলো :-

    1/  চাঁদ দেখে সিয়াম সাধন ও ঈদ উৎসব পালন করা  । 

    2/  চাঁদের খবর বা সংবাদ পাওয়া গেলে সিয়াম বা ঈদ উৎসব পালন করা অর্থাত ঐদিন ঊনত্রিশ দিন ধরা ।

     3/   আর যদি নব্যচাঁদ বা আল-হিলাল বা ক্রিসেন্ট মুন এর কোন সংবাদ না পাওয়া যায় তখন ঐ মাসকে 30 দিন পূর্ণ করবো  অথবা ঐ মাসটিকে হিসাব করবো । 

     4/  সুলতান বা চাঁদ কমিটি বা প্রশাসন যখন ঈদ বা সিয়ামের ঘোষণা দেয় । অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ যখন যে দিনটি গ্রহণ করবে সে দিনটি হল  ঈদ বা সিয়ামের দিন । অবশ্য সুলতান বা চাঁদ কমিটির বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রায় উপরোক্ত তিনটি শর্ত সাপেক্ষেই হয়ে থাকে অর্থাৎ ইবাদতকে সফল করার জন্য মহান আল্লাহ পাক দিনক্ষণ কে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করে একটি  সহজ সরল ব্যবস্থা করে দিয়েছেন যাতে মানুষের কোনরূপ অসুবিধা না হয় । এক্ষেত্রে কোন এলাকার মানুষ কখন রোজা রাখল বা কখন ঈদ করল কাদের ঈদ ৩০ দিন হলো কাদের ২৯ দিন হল এটা মূল বিষয় নয় মূল বিষয় হচ্ছে আল্লাহর বিধনকে মানুষ কে কি ভাবে নিচে সেটা ।

     এইগুলিই হলো মূলত বর্তমানে হিজরী তারিখ রেখা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল ভিত্তি বা নিয়ামক । বাকি বিষয়গুলো আমি উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন মনে করছি না তাই বাদ দিলাম । এখন আমি কিছু ব্যক্তিগত কথা বলি আমি কোরআন, হাদিস, মুফতি, মহাদ্দিস, ফকিহ্ এবং বিজ্ঞানের গবেষক সকলকেই আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করি ভক্তি করি এবং সকলের সত্যগুলো গ্রহণ করি ।  আমি সত্য গ্রহণের ক্ষেত্রে কারো কোন ব্যক্তিগত দোষ ত্রুটি কিছুই দেখি না ।    এটা আমার সহজাত বৈশিষ্ট্য । ইলম চর্চা করা আমার ব্যক্তিগত শখ । আমি বড় কোন বিজ্ঞানী, গবেষক এবং মুহাদ্দিস, মুফাস্সির নয় আর আমি এদের থেকে পৃথকও নয় । আমি সবসময় যে কোন জটিল বিষয়ে একটি প্রশান্তিমূলক ফায়সালা চাই । এটাই আমার অন্তরের ইচ্ছা ।  আমার সেই ইচ্ছা আজ পূরণ হওয়াই সমস্ত প্রশংসা জানায় আল্লাহ তায়ালার জন্য । আরেকটি কথা আমাকে কে মানলো আর কে মানলো না তা নিয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নয় । আমি চাই সত্য, সত্য আর সত্য । আমি সত্য ছাড়া কাউকে চিনি না কাউকে জানিনা ।

     হাদিস কেন একই রকম হয় না ?

    হাদিসের মূল বিষয় হলো বাস্তবতা এখানে কাল্পনিক কোন জিনিস উল্লেখযোগ্য নয় ।  হাদিস সব সময় বাস্তব জীবনে ব্যবহারিক বিষয়গুলির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয় । উদাহরণ হিসাবে নব্যচাঁদ বা আরবী মাসের প্রথম তারিখের কথাই বলি ।  নব্যচাঁদ দেখে আমরা ইবাদতের নতুন তারিখ নির্ধারণ করি ।  কিন্তু ঘটনা হলো আজ থেকে ডের হাজার বছর আগে কোন স্থানে নতুন চাঁদের খবর অন্য স্থানে পৌঁছানো ছিল অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার বা  অসম্ভব ।  তাই ইসলাম অত্যন্ত সহজ ভাবে ঘোষণা দেয় চাঁদ দেখে রোজা কর এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর । যা সারা বিশ্বব্যাপী পালন করা ছিল অতি সহজ সরল একটি ব্যাপার । আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ৩০ দিন পূর্ণ করো  অথবা তোমরা হিসেব করো ।  আজ পর্যন্ত, যদি কোন জায়গায় চাঁদ না দেখা যায় তখন আমারা 30 দিন ধরে নিই। এভাবেই আমরা 1500 বছর অতিক্রম করলাম ।  পৌছলাম ইন্টারনেটের যুগে । তাই বর্তমান যুগে আমাদের কাছে অত্যন্ত কঠিন হয়ে গেছে যে একই ঈদ একদিন বাংলাদেশে, একদিন ইন্ডিয়া আর একদিন পাকিস্তানের এটা কেন হয়  ?  আগে মানুষ জানতো না কোথায় কবে ঈদ হচ্ছে তাই তাদের জন্য মেনে নেওয়া সহজ ছিল কিন্তু বর্তমানে নতুন চাঁদের খবর সমস্ত মানুষের কাছে ক্ষণিকের মধ্যেই পৌঁছানোর কারণে মানুষ আর পূর্বের সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না যে ভারতে একদিন, বাংলাদেশে একদিন আর একদিন পাকিস্তানে ঈদ অনুষ্ঠিত হবে !  মহান আল্লাহ পাক ভালভাবেই জানেন যে আরবি তারিখ নিয়ে বিতর্ক হবে তাই তিনি সুলতানকে প্রাধান্য দিয়েছেন যাতে করে মানুষ এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার ক্ষেত্রে কোনরূপ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়ে ।  তাই দেড় হাজার বছর ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে বা দেশে বিভিন্ন তারিখ হলেও তা নিয়ে বেশী বিতর্ক হয়নি । তাই চাঁদ নিয়ে যখন বিতর্ক দেখা যায় তখন ওই অঞ্চলের রাষ্ট্রপ্রধান বা চাঁদ কমিটির আদেশ যথেষ্ট হয়ে যায় যার ফলে বিশ্বব্যাপী নতুন চাঁদ নিয়ে বিষেশ কোন সমস্যা দেখা দেয়নি গত দেড় হাজার বছর ধরে। যদিও বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন তারিখ নির্ধারণ হয়েছে । আমাদের সুবিধার জন্যই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসগুলো বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করেছেন যাতে করে ইবাদতের অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনরূপ অসুবিধা না হয় । কিন্তু বর্তমান সমাজে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান এতই উন্নত স্তরে উন্নীত হয়েছে যে, গত দেড় হাজার বছরের এই পুরনো বিষয়টি আজ আমাদের উপর পাহাড় সম বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।  তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম এর মহামূল্যবান বাণী সমূহকে নতুনভাবে ভাবার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে ।  একে আধুনিক রঙে রঙ্গিন করে সকলের সামনে সামঞ্জস্যভাবে উপস্থাপন করলে নিশ্চয়ই সারা বিশ্বে একই দিনে ( অবশ্যই আরবী-তারিখে ) বা একই বারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সারা বিশ্বে ঈদ উৎসব পালন করা যাবে যেমনভাবে আমরা একই দিনে বা একই তারিখে সারাবিশ্বে জুম্মার নামাজ পড়ে থাকি ।  এর ফলে দীর্ঘ দিন যাবত নব্যচাঁদ নিয়ে যে বিতর্ক চলে আসছে তার অবসান ঘটবে চিরদিনের মত  ইন শা আল্লাহ্ । আর ইসলাম হবে আরও আধুনিক আরও সৌন্দর্যের অধিকারী !

     আমি দাবি করছি এটা ১০০% গ্রহণযোগ্য এতে কোন সন্দেহ নেই ! এখন আমি হাদিসের ব্যাখ্যার পূর্বে আধুনিক বিজ্ঞানের কথাটাই ব্যক্ত করছি।

    নতুন চাঁদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

    পৃথিবীর সমস্ত অ্যাস্ট্রনমার বা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে একমত যে

     1. আপাত দৃষ্টিতে আমাদের পৃথিবী স্থির কিন্তু এর আহ্নিক গতি আছে ।  পৃথিবী তার নিজ কক্ষে 23 ঘন্টা 56 মিনিট 4.1 সেকেন্ডে একবার পূর্ণ আবর্তন করছে ।

     2. আমাদের পৃথিবীর সাপেক্ষে দূর আকাশে নক্ষত্ররা নিজ নিজ অবস্থানে স্থির রয়েছে ।
      
     3. আপাতো দৃষ্টিতে বা আপেক্ষিক ভাবে চাঁদ পৃথিবীকে 27⅓ দিনে এবং সূর্য 365¼ দিনে পরিক্রমা করছে ।

     4. চাঁদ,  সূর্যের সাপেক্ষে আমাদের পৃথিবীকে পরিক্রমা করছে 29½ দিনে । আর এটাই হলো আরবি চন্দ্র মাসের সময়কাল । এই বিষয়টি নিয়ে কোন অ্যাস্ট্রনমারের কোন প্রকার একতেলাফ বা মতানৈকো  নেই ।
     
     5. আমাদের সূর্য পৃথিবীর ভূমধ্য রেখার সহিত সাড়ে 23. 5 ডিগ্রি কোণে নত অবস্থায় পরিক্রমা করছে । সূর্যের এই কক্ষপথটিকে বলি ক্রান্তিবৃত্ত ।

     6. আমাদের চন্দ্র আবার ক্রান্তিবৃত্তের সহিত  ৫ ডিগ্রি কোণে নত অবস্থায় পৃথিবীকে পরিক্রমা করছে । এই কারণেই সৌরদিন ( solar day ) এর তুলনায় চন্দ্রদিন ( lunar day or tidal day) এর হ্রাস-বৃদ্ধির পরিমাণ অনেক বেশী হয় ।
     
     7.  প্রতি বছর এই সৌরদিনের দৈর্ঘ্য অতি অল্প মাত্রায় পরিবর্তিত হতেই থাকে । তবে গড় অবস্থা থেকে 15-16 মিনিট এর মধ্যেই পরিবর্তিত হয় ।  বর্তমানে সৌরদিন 24 ঘন্টার চেয়ে 21 সেকেন্ড কম বা 29 সেকেন্ড বেশি হতে পারে । অনুরূপ ভাবে চন্দ্রদিন গড় অবস্থা 24 ঘণ্টা 50 মিনিটের চেয়ে 6 ঘণ্টা কম বা 7 ঘণ্টা বেশী হতে পারে ।

     8.  সূর্য আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় 15 কোটি কি.মি দূরে রয়েছে । আর চাঁদ আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় 4 লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে ।
      
      9. সূর্যের নিজের আলো আছে তাই এর কলা নেই । আকাশে সূর্যকে প্রতি দিনই দেখা যায় । অপর দিকে চন্দ্রের নিজস্ব আলো না থাকায় এর চন্দ্রকলা দেখা যায় ।  আর অমাবস্যার সময়ে চন্দ্রকে দেখতে পাই না ।

      10. সৌরদিনের কারণে মূলত খতু পরিবর্তন হয় ।  আর চন্দ্রদিনের কারণে মূলত জোয়ার-ভাঁটা হয় । 

    আন্তর্জাতিক হিজরী  তারিখ রেখাটি একটি চলমান তারিখ রেখা

      অতএব এ কথা আমরা সহজেই বলতে পারি যে, যেহেতু চাঁদ সূর্যের মতোই আমাদের পৃথিবীর একটি জ্যোতিষ্ক সুতরাং সূর্যের মতো চন্দ্রের ও তারিখ রেখা নির্ধারণ করা সম্ভব । সূর্যের উদয় এবং অস্ত যেমন সারা পৃথিবীতে একটি চক্রে আবর্তন করে ঠিক তদ্রূপ নতুন চাঁদও সারা পৃথিবীকে একটি চক্রে আবর্তন করে । তবে নতুন চাঁদের ঘটনাটি সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে তুলনীয় । সূর্য যেমন বাংলাদেশ, ভারত, আরব, আফ্রিকা, ইউরোপ, আটলান্টিক মহাসাগর, আমেরিকা,  এবং পূর্ব এশিয়া হয়ে সারা পৃথিবীত পরিক্রমা করে, ঠিক তদ্রূপ চাঁদও ওই প্রায় একই পথেই পৃথিবীর একটার পর একটা দেশের উপর উদয় হতে থাকে । পার্থক্য শুধু এতোটুকু সূর্যের প্রখর আলোর জন্য এটা আমরা অবিচ্ছিন্নভাবে দেখতে পারি কিন্তু চন্দ্রের ক্ষেত্রে দুর্বল আলোর জন্য অধিকাংশ জায়গায় গ্যাপ পাওয়া যায় বা অদৃশ্য দেখা যায় । সুতরাং পৃথিবীর কোন একটি জায়গায় যদি নতুন চাঁদ দেখা যায় তখন আর ওই চাঁদ আগামী অমাবস্যার আগে পর্যন্ত অদৃশ্য থাকে না বরং একটা দেশের পর আর একটা দেশের অবিচ্ছিন্নভাবে উদয় হতে থাকে । উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি এই ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরের নতুন চাঁদ সর্বপ্রথম দেখা দেয় আরব উপমহাদেশে তারপর আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা, পূর্ব এশিয়া এবং বাংলাদেশ ঘুরে সর্বশেষে প্রায় 21½ ঘণ্টা পর ভারতবর্ষে ওই চাঁদ দেখতে পায় । ২০২৩ সালের এই শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ নিয়ে কোন বিতর্ক দেখা দেয়নি কারণ এটা ছিল সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত । অর্থাৎ মূল বিষয় হল কোন জায়গায় নতুন চাঁদ দেখা দিলে ওই দ্রাঘিমা রেখার পশ্চিমে সকল দেশের চাঁদ হয়ে যাবে এবং পূর্বের দেশ পরের দিন চাঁদ দেখবে । আর এরই মধ্যে কোন দেশে চাঁদ  দেখতে বাকি থাকলে ধরে নিতে হবে ওই দেশের চাঁদ হয়েছে কিন্তূ মেঘাচ্ছন্ন কারণে দেখা যায়নি । আর যে সব দেশ অতি উচ্চ অক্ষাংশ রেখায় অবস্থান করছে অর্থাৎ 66½° বেশি অক্ষাংশ রেখার মধ্যে অবস্থান করছে, তারা তাদের নিকটবর্তী পাশের দেশকে অনুসরণ করবে । কারণ মেরু অঞ্চলে যেমন ছমাস তিন ও ছয় মাস রাত থাকে তদ্রূপ ওই অঞ্চলে একপক্ষ কাল চাঁদকে দেখা যাবে একপক্ষ কাল চাঁদকে দেখা যাবে না । এই ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি গ্রহণযোগ্য বিষয় হল ওই দ্রাঘিমা রেখার সব থেকে পাশের দেশকে অনুসরণ করা উচিত এতে বিজ্ঞানকে বেশি গ্রহণ করা হয়ে থাকে বা বিষয়টি সব থেকে বেশি বিজ্ঞানসম্মত । অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি এই নতুন চাঁদ কে যদি আমরা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে গ্রহণ করি তাহলে একই দিনে ঈদ ও সিয়াম সাধন করা বা আন্তর্জাতিক হিজরির তারিখ রেখা নির্ধারণ করা কোনো কঠিন ব্যাপার নয় ।
    আর আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ রেখাটি আন্তর্জাতিক তারিখ রাখার মত স্থির নয় ।  বরং এটি চলমান একটি তারিখ রেখা এই রেখাটি প্রতি হিজরী মাসেই পরিবর্তন হতে থাকবে ।

     আমি আশা করছি আগামীতে ইনশাল্লাহ আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ দেখা দেখবো। এই সংস্কারটি হবে আযানে মাইক ব্যবহার করার মত কারণ আযানের যা উদ্দেশ্য মাইকের ব্যবহারেরও তাই উদ্দেশ্য । চাঁদ নিয়ে যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদিস ব্যক্ত করেছেন তার মূল উদ্দেশ্য হল যে এই উম্মতকে ফিতনা থেকে বাঁচানো । চাঁদের এই বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যাও অনুরূপভাবে এই উম্মতকে ফিতনা থেকে বাঁচাবে । এর ফলে আমরা লাইলাতুল কদরের মত গুরুত্বপূর্ণ রাত্রিকে সারা বিশ্বে আরবি হিজরির তারিখে একই দিনে অনুষ্ঠিত করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ । এর ফলে সারা বিশ্বের মানুষ আবারও একবার দেখবে যে কোরআন হাদিস কখনো প্রকৃত বিজ্ঞানের বিরোধী হতে পারেনা কারণ ইসলাম ধর্ম,  সম্পূর্ণ সত্য একটি ধর্ম ।

    এই হল পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য  সম্পর্কিত কিছু সাইনটিফিক ঘটনা ।
     মূল কথা হলো উপরোক্ত এই বিষয়গুলির উপর কারো কোন মতভেদ নেই ।

      নতুন চাঁদ সম্পর্কিত হাদিস গুলির ব্যাখ্যা :


     1.  চাঁদ দেখে হিজরী মাসের তারিখ নির্ধারণ করা-

      أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِهِلَالِ شَهْرِ رَمَضَانَ: إِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَصُومُوا ثُمَّ إِذَا رَأَيْتُمُوهُ، فَأَفْطِرُوا فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ ثَلَاثِينَ يَوْمًا.

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের চাঁদের উল্লেখ করে বলেছেনযখন হিলাল দেখ তখন রোযা রাখ। এরপর যখন হিলাল দেখ তখন রোযা 
    ছাড় । যদি হিলাল দৃষ্টির আড়াল হয়ে যায় তাহলে তাকে ত্রিশ দিন গণনা করো। 

    এই হাদীসটি আগের যুগের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উপযুক্ত ছিল। 


     لا تصوموا حتى تَرَوُا الهلالَ ، ولا تُفْطِروا 
    حتى تَرَوْهُ ، فإن غُمَّ عليكم فاقْدُروا له

    নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা রাখবেন না এবং চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা ভাঙবেন না।  যদি এটি আপনার জন্য মেঘলা হয়, তাহলে এটির জন্য হিসাব করুন ।
      Do not fast until you see the new moon, and do not break your fast until you see it. If it is cloudy for you, then estimate for it.

    এই হাদিসটির অন্যান্য ব্যাখ্যা থাকলেও একটি ব্যাখ্যা এই যে, যদি চাঁদ না দেখা যায় তাহলে উহার হিসাব করো । এই হাদিসের প্রথম অংশ এবং অন্যান্য হাদীস থেকে জানতে পারি যে, চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোজা ভাঙো ।  এটা একটি হাদিসের মোজেজা ছাড়া আর কিছুই নয় এর কারণ হলো আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই জানতেন যে কিছুকাল পরে এমন এক যুগ আসবে যখন পৃথিবীর কোন এক জায়গায় চাঁদ দেখা গেলে সেই চাঁদের খবর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে । তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদিসের শেষ অংশে বলেছেন : -  " যদি এটি আপনার জন্য মেঘলা হয়, তাহলে এটির জন্য হিসাব করুন । " 
       তাই এই হাদিসের ব্যাখ্যা স্বরূপ আমরা সহজেই বলতে পারি । এই ইন্টারনেটের যুগে পৃথিবীর কোন জায়গায় চাঁদের খবর পাওয়া গেলে সেই চাঁদের হিসাবের ভিত্তিতে পৃথিবীর কোন কোন জায়গায় চাঁদ হয়েছে তার একটি হিসাব দেওয়া যায় । আর পৃথিবীর কোন কোন জায়গায় পরের দিন চাঁদ হবে তারও একটি হিসাব দেওয়া যায় ।
     
      2.  পশ্চিমে অবস্থিত দেশের চাঁদ পূর্বে অবস্থিত দেশের জন্য সম্পূর্ণ  গ্রহণযোগ্য নয়-

    عَنْ كُرَيْبٍ أَنَّ أُمَّ الْفَضْلِ بِنْتَ الْحَارِثِ بَعَثَتْهُ إِلَى مُعَاوِيَةَ بِالشَّامِ قَالَ فَقَدِمْتُ الشَّامَ فَقَضَيْتُ حَاجَتَهَا وَاسْتُهِلَّ عَلَىَّ رَمَضَانُ وَأَنَا بِالشَّامِ فَرَأَيْتُ الْهِلاَلَ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ ثُمَّ قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فِى آخِرِ الشَّهْرِ فَسَأَلَنِى عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهما - ثُمَّ ذَكَرَ الْهِلاَلَ فَقَالَ مَتَى رَأَيْتُمُ الْهِلاَلَ فَقُلْتُ رَأَيْنَاهُ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ فَقَالَ أَنْتَ رَأَيْتَهُ فَقُلْتُ نَعَمْ وَرَآهُ النَّاسُ وَصَامُوا وَصَامَ مُعَاوِيَةُ فَقَالَ لَكِنَّا رَأَيْنَاهُ لَيْلَةَ السَّبْتِ فَلاَ نَزَالُ نَصُومُ حَتَّى نُكْمِلَ ثَلاَثِينَ أَوْ نَرَاهُ فَقُلْتُ أَوَلاَ تَكْتَفِى بِرُؤْيَةِ مُعَاوِيَةَ وَصِيَامِهِ فَقَالَ لاَ هَكَذَا أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ  صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم

    কুরাইব থেকে বর্ণিত :- 

    " একদা উম্মুল ফায্ল বিন্তুল হারেষ আমাকে শাম দেশে মুআবিয়ার নিকট পাঠালেন। আমি শাম (সিরিয়া) পৌঁছে তাঁর প্রয়োজন পূর্ণ করলাম। অতঃপর আমার শামে থাকা কালেই রমযান শুরু হল। (বৃহস্পতিবার দিবাগত) জুমআর রাত্রে চাঁদ দেখলাম। অতঃপর মাসের শেষ দিকে মদীনায় এলাম। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) আমাকে চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ?’ আমি বললাম, ‘আমরা জুমআর রাত্রে দেখেছি।’ তিনি বললেন, ‘তুমি নিজে দেখেছ?’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ। আর লোকেরাও দেখে সিয়াম রেখেছে এবং মুআবিয়াও সিয়াম রেখেছেন।’ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘কিন্তু আমরা তো (শুক্রবার দিবাগত) শনিবার রাত্রে চাঁদ দেখেছি। অতএব আমরা ৩০ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অথবা নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সিয়াম রাখতে থাকব।’ আমি বললাম, ‘মুআবিয়ার দর্শন ও তাঁর সিয়ামের খবর কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়?’ তিনি বললেন, ‘না। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে এ রকমই আদেশ দিয়েছেন । "

    এখানে দূরবর্তী পশ্চিম অঞ্চলের চাঁদ দেখা কে গ্রহণ করা হয়নি ।  এর কারণ স্বরূপ বলা যায় ওই অঞ্চলটি মদিনার চন্দ্র ও সূর্যের উদয়অস্ত হতে সম্পূর্ণ আলাদা । তাই সিরিয়াতে নতুন চাঁদের খবর মদিনার জন্য যথেষ্ট নয় ।

        3.  পূর্বে অবস্থিত দেশের চাঁদ পশ্চিমে অবস্থিত দেশগুলির জন্য সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য-

     عن ربعى بن حراش عن رجل من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم قال: اختلف الناس في آخر يوم من رمضان، فقدم أعرابيان فشهدا عند النبي صلى الله عليه وسلم بالله لَأهلَّا الهلال أمس عشية، فأمر رسول الله صلى الله عليه وسلم الناس أن يفطروا.

      রিব্বি বিন হারাশ হতে বর্ণিত, তিনি ছিলেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্য থেকে একজন ব্যক্তি, যিনি বলেছিলেন :  রমজানের শেষ দিনে লোকেদের মধ্যে মতবিরোধ হচ্ছিল, তখন দু'জন গ্রাম্য ব্যক্তি এসে সাক্ষ্য দিল । নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস  সাল্লাম এর সামনে , গতকাল সন্ধ্যায় তিনারা আল্লাহতায়ালার নাম নিয়ে বললেন আমরা নতুন চাঁদ দেখেছি ।  সুতরাং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলকে রোজা খোলার জন্য নির্দেশ দিলেন ।

    এই হাদিসে বর্ণিত দুজন গ্রাম্য ব্যক্তি কোথা থেকে এসেছিলেন অর্থাৎ পূর্ব থেকে না পশ্চিম থেকে এসেছিলেন তা বর্ণিত হয়নি ।তবে তবে এ বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই যে তিনারা পাশের দূরবর্তী এলাকার কোন লোক ছিলেন । অর্থাৎ এই দুজন গ্রাম্য ব্যক্তি না তো ছিলেন নিজ এলাকার আর না তো ছিলেন বহু দূরের কোন এলাকার  ব্যক্তি  । এই হাদিসের সারমর্ম থেকে একথা সহজেই অনুমান করা যায় যে এই দুজন গ্রাম্য ব্যক্তি ছিলেন একই উদয়াস্ত অঞ্চলের ব্যক্তি ।  আর যদি ঘটনা ক্রমে ওই দুজন গ্রাম্য ব্যক্তি পূর্ব দিকে কোন লোক হয়ে থাকেন তাহলে তো তাদের নতুন চাঁদের সাক্ষ্য নেওয়া ব্যাপার তো কোন দোষেরই নয় বরং সেটা হবে অতি প্রাসঙ্গিক । সে ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পূর্বের দেশগুলির নতুন চাঁদের সাক্ষ্য পশ্চিমের দেশসমূহ নিতে পারবে কিন্তু পশ্চিমের দেশসমূহের সাক্ষী পূর্বের দেশগুলি নিতে পারবে না ।

        4.  জনগণ বা শাসকের রায়

    الصوم يوم تصومون، والفطر يوم تفطرون، والأضحى يوم تضحون. الترمذي 

    "  রোজা হলো সে দিন, যে দিন তোমরা সকলে রোজা রাখো, আর ইফতার হলো সে দিন, যে দিন তোমরা সকলে ইফতার করো, আর কোরবানি হলো সে দিন, যে দিন তোমরা তোমাদের পশু জবেহ 
     করো । "   (  তিরমিজি  )

     ইসলাম এখানে জনগণের রায়কে প্রধান্য দিয়েছে ।

     5.  অতি নিকট স্থানের চাঁদ পূর্ব পশ্চিম সকলের দেশের জন্য সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য-

     عن ربعى بن حراش عن رجل من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم قال: اختلف الناس في آخر يوم من رمضان، فقدم أعرابيان فشهدا عند النبي صلى الله عليه وسلم بالله لَأهلَّا الهلال أمس عشية، فأمر رسول الله صلى الله عليه وسلم الناس أن يفطروا.

      রিব্বি বিন হারাশ হতে বর্ণিত, তিনি ছিলেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্য থেকে একজন ব্যক্তি, যিনি বলেছিলেন :  রমজানের শেষ দিনে লোকেদের মধ্যে মতবিরোধ হচ্ছিল, তখন দু'জন গ্রাম্য ব্যক্তি এসে সাক্ষ্য দিল । নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস  সাল্লাম এর সামনে , গতকাল সন্ধ্যায় তিনারা আল্লাহতায়ালার নাম নিয়ে বললেন আমরা নতুন চাঁদ দেখেছি ।  সুতরাং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলকে রোজা খোলার জন্য নির্দেশ দিলেন ।

      এই হাদিসের ব্যাখ্যা স্বরূপ মুহাদ্দিসিনগণ বলেছেন যে সমস্ত অঞ্চলে উদয়াস্ত  একই তত দূর স্থান পর্যন্ত নতুন চাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাবে । এই দূরত্ব যদি এতদূর পর্যন্ত বিস্তৃতি হয় যে যাদের চন্দ্র ও সূর্যের উদয় অস্ত ভিন্ন তাহলে সাক্ষ্য নতুন চাঁদের সাক্ষ্য নেওয়া যাবে না । এক্ষেত্রে সবথেকে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য দূরত্বটি হল সলাতে কসরের দূরত্ব অর্থাৎ তিনদিন পায়ে হাঁটার পথ 48 মাইল বা 72 কিলোমিটারের পথ । কিছু কিছু উলামায়ে কেরাম তো বলেছেন মাত্র একদিনের পথ যেটা খুবই কম দূরত্ব মনে হয় । এই দূরত্বে চন্দ্র ও সূর্যের উদয় ও অস্ত প্রায় একই । তাই আমার কাছে সলাতে কসরে দূরত্বটি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে যেটা তিনদিন পায়ে হাঁটার পথের দূরত্ব  ।

      এখন আপনারা ঠিক করুন কোন স্থানে চাঁদ দেখার পর পশ্চিমের দেশসমূহ যদি গ্রহণ করে পূর্বের  দেশগুলি ছেড়ে দেয় তাহলে কি সেটা কোরআন এবং হাদিসের বিরোধী হয় ?

    আল কুরআনে হিজরীর তারিখ রেখার কথা

     يَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الأَهِلَّةِ، قُلْ هِيَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ

    অর্থাৎ, ওরা আপনাকে নব্যচাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, তা হল মানুষ ও হজ্জের জন্য সময় নির্দেশক।
                                              ( 2:189 )

    আসল কথা হল এই যে চাঁদের উপযোগিতা এতটাই বেশি যে আমরা চাঁদকে শুধুমাত্র চোখে দেখার মাধ্যমে চাঁদের একটা তারিখ আমাদের স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে । অর্থাৎ আমি এখানে বলতে চাইছি যে আকাশের তারকারাজি যেমন রুট ম্যাপ ঠিক তদ্রুপ চান্স হচ্ছে একটা সার্বজনীন ক্যালেন্ডার । এই আয়াতে দ্বারা আল্লাহপাক আমাদিগকে এই বার্তা দিচ্ছে যে নতুন চাঁদ হচ্ছে আন্তর্জাতিক হিজরি তারিখ রেখা । এর মাধ্যমে যেন আমরা প্রতি মাসে আরবি তারিখ রেখা ঠিক করতে পারি । এই নতুন চাঁদের দ্বারা আমরা ইবাদতের জন্য হজ ও সিয়ামের তারিখ নির্ধারণ করতে পারি । অনেকে হয়তো বলবেন যে এখানে তো একই দিনে হজ বা সিয়ামের কথা সারা বিশ্বে মানুষের জন্য বলেননি তার উত্তরে আমি বলি এখানে তো এ কথাও বলেনি যে তোমরা দু-তিন দিন ধরে হজ্জ , সিয়াম ও ঈদ পালন করবে । এই নতুন চাঁদ যে ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল হিজরী ডেট লাইন তাতে কোন সন্দেহ নেই  ।

    فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

    অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যে কেউ এই মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে।      
                                       [ 2:185 ]

    এই আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক আমাদিগকে বোঝাতে চেয়েছেন তোমরা যারা এই পবিত্র রমজান মাস পাবে তারা যেন রোজা রাখে । এই আয়াতের সব থেকে লক্ষ্য করার মত বিষয় হলো মাসটি কিন্তু একটি নির্দিষ্ট মাস । এই মাসটি কিন্তু কোন কর্মেই অনির্দিষ্ট নয় । যে কথা আর না বললেই নয় যে হাদিস পাকের মধ্যে যে বিতর্ক দেখা যায় বা একতেলাফ দেখা যায় তা বাস্তবায়নের জন্য অর্থাৎ সামাজিক বাস্তবতার পেক্ষাপটে বিভিন্ন রকম হাদিস এসেছে । যাতে করে কোন অনুষ্ঠান বা ইবাদত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি না হয় । আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সত্য বোঝার তৌফিক দান করুন আমীন ।


    একই দিনে ঈদ ও সিয়াম পালন করা কোরআন ও সুন্নাহর খেলাফ নয়

    সারা বিশ্বে একই দিনে বা তারিখে ঈদ ও সিয়াম আমরা তখনই পালন করতে পারব যখন সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ রেখা প্রতিষ্ঠিত হবে ।


    এখনো কি মুসলিম উম্মার উপযুক্ত সময় আসেনি আন্তর্জাতিক আরবী-তারিখ রেখা প্রতিষ্ঠিত করার ?

     ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ 1263 খ্রিস্টাব্দের জন্মগ্রহণ করেন । আজ থেকে প্রায় সাড়ে 750 বছর আগে  তিনি অনুধাবন করতে পেরেছেন যে পূর্বের দেশগুলিতে চাঁদ দেখা গেলে পশ্চিমে দেশগুলোতে তা অবশ্যই চাঁদ দেখা দিবে এবং পশ্চিমের দেশগুলো চাঁদ দেখলে পূর্বে তা গ্রহণযোগ্য হবে না । কিন্তু তিনার সেই অদ্ভূতপূর্ব জ্ঞানকে আমরা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছি । যে কারণে আমরা আজও এই একবিংশ শতাব্দীতে ইন্টারনেটের যুগে আন্তর্জাতিক হিজরির তারিখ রেখা আজও গঠন করতে পারিনি ।
    যদি আমরা ইন্টারন্যাশনাল হিজরী ডেট লাইন গঠন করতে পারতাম তাহলে আজকে আর দু তিন দিন ধরে ঈদ ও সিয়াম পালন হতো না সারা বিশ্বে ।

    আজ হোক আর কাল হোক সত্য নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে আমি নিশ্চিত। আর এর জন্য যেটা সর্বপ্রথম দরকার তা হল আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা নির্ধারণ করা । হ্যাঁ আমি সৌরদিনের তারিখ রেখার কথা বলছি না আমি বলছি চন্দ্র দিনের বা আরবি চন্দ্র মাসের তারিখ রেখার কথা ।  আমরা যদি প্রতিমাসে আরবি তারিখ রেখা নির্ধারণ করতে পারি তাহলে সেই অনুযায়ী আমরা আরবি তারিখ কে অতি সহজে সার্বজনীন ভাবে উপস্থাপন করতে পারি । এর ফলে বিশ্বব্যাপী একই দিনের মধ্যেই সিয়াম, ঈদ উৎসব ও লাইলাতুল কদর মত রাত্রি উদযাপন হবে । ভবিষ্যতে আর কখনোই দু-তিন দিন ধরে ঈদ উৎসব পালিত হবে না । 

    ইসলাম ও সঠিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অ্যাস্ট্রোনমির সঠিক রুপরেখা জানতে হলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত ।

    সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ ও সিয়াম পালন করা কি সম্ভব ?

    হ্যাঁ, সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ ও সিয়াম পালন করা সম্ভব, তবে অবশ্যই হিজরির তারিখ রেখা মেনে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ রেখা মান্য করে ।

    এই আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ রেখা মান্য করলে কি সারাবিশ্বের সকল স্থানে মানুষের হিজরির মাস সমান হবে ।

    আন্তর্জাতিক এই হিজরী তারিখ রেখা সারা বিশ্বের মানুষ যদি মেনেও নেয় তবুও সকল স্থানের হিজরির মাস সমান হবে না কোথাও 30 দিন কোথাও বা 29 দিন হতে পারে তবে খুব কম স্থানের জন্য এমন ঘটনা ঘটবে ।

    আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ রেখা কিভাবে গঠিত হবে ?

    আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ রেখা গঠিত হবে নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে । অর্থাৎ অমাবস্যার পর পৃথিবীর যে জায়গার সর্বপ্রথম চাঁদ দেখা দেবে সেই দ্রাঘিমা রেখা টি হল আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ রেখা ।

    আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ রেখা বা ইন্টারন্যাশনাল হিজরী ডেট লাইন কি ?

    আন্তর্জাতিক হিজরির তারিখ রাখার মাধ্যমে প্রত্যেক আরবি মাসের প্রথম তারিখকে চিহ্নিত করা হয় । এই তারিখ রেখাটি চিহ্নিত করার ফলে প্রতি বছর মাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় পৃথিবীর দুটি স্থানের মধ্যে সময়ের পার্থক্য দু-তিনদিন পর্যন্ত হয়ে থাকে যেখানে একদিনের বেশি পার্থক্য হওয়া কখনোই কাম্য নয় ।  এই  আন্তর্জাতিক হিজরী  তারিখ রেখাটি পৃথিবীর যে কোন দুটি স্থানের মধ্যে এই পার্থক্য দূর করে মাত্র একদিনের মধ্যেই আনা সম্ভব হয়েছে ।

    গত দেড় হাজার বছর ধরে কেন আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ রেখা গঠিত হয়নি ?

    আগে তো যোগাযোগ ব্যবস্থা এত উন্নত হয়নি এবং বর্তমান বছরগুলিতে বিজ্ঞান ও হাদিসের মধ্যে সামঞ্জস্য করণ না করতে পারার কারণে এমনটি করা সম্ভব হয়নি অর্থাৎ আন্তর্জাতিক হিজরী তারিখ লেখাটি গঠন করা সম্ভব হয়নি ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ