শুধু মাত্র সুরা ইয়াসিন যে মহাকাশ বিজ্ঞানের বিষয়গুলির সফল ভাবে বর্ণনা করেছে তা সম্পূর্ণ নির্ভুল ও খাঁটি সত্য এতে কোন সন্দেহ নেই । কত সুন্দর ভাবে মহান আল কুরআন মহাকাশ বিজ্ঞানকে ব্যক্ত করেছে সে কথায় আমি ব্যাখ্যা সহকারে বর্ণনা করছি । আমি এখানে কেবলমাত্র সূরা ইয়াসিনের ৩৩ আয়াত থেকে নিয়ে ৫০ আয়াত পর্যন্ত ব্যক্ত করছি যার ফলে এটি স্পষ্ট প্রমাণিত হবে যে মহান আল কুরআন অতুলনীয় একটি গ্রন্থ, যার সাথে কারোর কোন তুলনায় হয় না আর যদি সমগ্র কোরআনকে যথাযথভাবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যক্ত করা যায় তাহলে আল কোরআন হবে কত বিস্ময়কর একটা মহাকাশ বিজ্ঞানের গ্রন্থ এবং অ্যাস্ট্রোনোমির রূপকার ।
এর থেকে আমরা সহজে উপনীত হতে পারি যে আল কোরআন মহান স্রষ্টার বাণী ছাড়া অন্য কিছুই হতে পারে না । মহান আল্লাহপাক ঘোষণা করেন :
وَ اٰیَۃٌ لَّہُمُ الۡاَرۡضُ الۡمَیۡتَۃُ ۚ ۖ اَحۡیَیۡنٰہَا وَ اَخۡرَجۡنَا مِنۡہَا حَبًّا فَمِنۡہُ یَاۡکُلُوۡنَ ﴿۳۳
33 : আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী, যাকে আমরা সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে বের করি শস্য, অতঃপর তা থেকেই তারা খেয়ে থাকে।
وَ جَعَلۡنَا فِیۡہَا جَنّٰتٍ مِّنۡ نَّخِیۡلٍ وَّ اَعۡنَابٍ وَّ فَجَّرۡنَا فِیۡہَا مِنَ الۡعُیُوۡنِ ﴿ۙ۳۴
34 : আর সেখানে আমরা সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান অতঃপর সেখানে উৎসারিত করি কিছু প্রস্রবণ,
لِیَاۡکُلُوۡا مِنۡ ثَمَرِہٖ ۙ وَ مَا عَمِلَتۡہُ اَیۡدِیۡہِمۡ ؕ اَفَلَا یَشۡکُرُوۡنَ ﴿۳۵
35 : যাতে তারা খেতে পারে তার ফলমূল অথচ তাদের হাত এটা সৃষ্ট করেনি । তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না ?
سُبۡحٰنَ الَّذِیۡ خَلَقَ الۡاَزۡوَاجَ کُلَّہَا مِمَّا تُنۡۢبِتُ الۡاَرۡضُ وَ مِنۡ اَنۡفُسِہِمۡ وَ مِمَّا لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۶
36 : পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন, যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদ এবং তাদের (মানুষদের) মধ্য থেকেও (পুরুষ ও নারী)। আর তারা যা জানে না তা থেকেও ।
وَ اٰیَۃٌ لَّہُمُ الَّیۡلُ ۚ ۖ نَسۡلَخُ مِنۡہُ النَّہَارَ فَاِذَا ہُمۡ مُّظۡلِمُوۡنَ ﴿ۙ۳۷
37 : তাদের জন্য একটি নিদর্শন হচ্ছে রাত, আমি উহা থেকে দিনকে সরিয়ে নেই, ফলে তখনই তারা অন্ধকারে ডুবে যায় ।
وَ الشَّمۡسُ تَجۡرِیۡ لِمُسۡتَقَرٍّ لَّہَا ؕ ذٰلِکَ تَقۡدِیۡرُ الۡعَزِیۡزِ الۡعَلِیۡمِ ﴿ؕ۳۸
38 : আর সূর্য ইহার জন্য (অর্থাত আমাদের পৃথিবীর জন্য ) প্রদক্ষিণ করে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে, এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নির্ধারণ।
এখানে নির্দিষ্ট কক্ষপথ বলতে পৃথিবী হতে প্রায় 15 কোটি কিমি দূর থেকে সূর্য ক্রান্তিবৃত্তে পৃথিবীকে প্রায় 365, দিনে আমাদের পৃথিবীকে পরিক্রমণ করেছে একথা বোঝানো হয়েছে । সর্ব জ্ঞানের অধিকারী মহান আল্লাহপাক খুব ভাল করেই জানেন যে, বুধ, শুক্র, মঙ্গল ইত্যাদি গ্রহগুলিকে সূর্যের চারিদিকে ঘুরতে দেখে মানুষ বিভ্রান্ত হবে যে, যেহেতু পৃথিবী একটি গ্রহ সুতরাং পৃথিবীও সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে । তারা মানতে চাইবে না যে, সূর্যও চন্দ্রের মত পৃথিবীকে 365, দিনে একটি পূর্ণ পরিক্রমা করছে তাই আল্লাহপাক সূর্য তার নির্দিষ্ট কক্ষে পরিক্রমা করছে বলার পরে উল্লেখ করেছেন যে, এটা মহাপরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের (আল্লাহর) নিয়ন্ত্রণ ।
وَ الۡقَمَرَ قَدَّرۡنٰہُ مَنَازِلَ حَتّٰی عَادَ کَالۡعُرۡجُوۡنِ الۡقَدِیۡمِ ﴿۳۹
39 : আর চাঁদের জন্য নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মন্যিল; অবশেষে সেটা শুষ্কবাঁকা, পুরোনো খেজুর শাখার আকারেফিরে যায় বা ফিরে আসে ।
এটা কিন্তু খুবই অবাক করার মত একটি তথ্য সূর্য যেখানে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে অর্থাৎ ক্রান্তিবৃত্তে পরিক্রমা করে চন্দ্র কিন্তু সেরকম নির্দিষ্ট কোন কক্ষপথ নেই অর্থাৎ এর কক্ষপথ সব সময় পরিবর্তন হয় অর্থাৎ বিভিন্ন উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরতে থাকে ।
لَا الشَّمۡسُ یَنۡۢبَغِیۡ لَہَاۤ اَنۡ تُدۡرِکَ الۡقَمَرَ وَ لَا الَّیۡلُ سَابِقُ النَّہَارِ ؕ وَ کُلٌّ فِیۡ فَلَکٍ یَّسۡبَحُوۡنَ ﴿۴۰
40 : সূর্যের সাধ্য নাই যে, সে চন্দ্রকে ধরে ফেলে ( কারণ চন্দ্র থাকে পৃথিবী হতে প্রায় তিন লক্ষ কিমি দূরে আর সূর্য পৃথিবী হতে প্রায় পনেরো কোটি কিমি দূরে ) রাত ও দিনের পূর্বে আসতে পারে। (কারণ রাত ও দিন পৃথিবীর আহ্নিকগতির ফলে সৃষ্ট দুইটি সম্পূর্ণ বিপরীত এবং ভিন্ন অবস্থা তা হল পৃথিবীর আলোক বৃত্ত ও ছায়াবৃত্ত ) প্রত্যেকেই ( অর্থাৎ পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য সহ সমস্ত সৃষ্টি প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে) নিজ-নিজ কক্ষে আবর্তন করে ।
وَ اٰیَۃٌ لَّہُمۡ اَنَّا حَمَلۡنَا ذُرِّیَّتَہُمۡ فِی الۡفُلۡکِ الۡمَشۡحُوۡنِ ﴿ۙ۴۱
41 : আর তাদের জন্য নিদর্শন এই যে, আমরা তাদের বংশধরদেরকে বোঝাই নৌযানে আহরণ করিয়েছিলাম ।
এখানে হযরত নূহ আঃ এর নৌকাকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে ।
وَ خَلَقۡنَا لَہُمۡ مِّنۡ مِّثۡلِہٖ مَا یَرۡکَبُوۡنَ ﴿۴۲
42 : এবং তাদের জন্য অনূরুপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি যাতে তারা আরোহণ করে ।
وَ اِنۡ نَّشَاۡ نُغۡرِقۡہُمۡ فَلَا صَرِیۡخَ لَہُمۡ وَ لَا ہُمۡ یُنۡقَذُوۡنَ ﴿ۙ۴۳﴾
43 : আর আমরা ইচ্ছা করলে তাদেরকে ( জলে বা মহাশূনে ) নিমজ্জিত করতে পারি; সে অবস্থায় তাদের কোন উদ্ধারকারী থাকবে না এবং তারা পরিত্রাণও পাবে না ।
اِلَّا رَحۡمَۃً مِّنَّا وَ مَتَاعًا اِلٰی حِیۡنٍ ﴿۴۴
44 : কিন্ত আমর পক্ষে হতে কৃপা না হলে এবং কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দেয়ার উদ্দেশ্যে তা করিনাই ।
وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُمُ اتَّقُوۡا مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡکُمۡ وَ مَا خَلۡفَکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ ﴿۴۵
45 : আর যখন তাদেরকে বলা হয়, 'যা তোমাদের সামনে ও তোমাদের পিছনে রয়েছে সে ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন কর; যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয় '।
وَ مَا تَاۡتِیۡہِمۡ مِّنۡ اٰیَۃٍ مِّنۡ اٰیٰتِ رَبِّہِمۡ اِلَّا کَانُوۡا عَنۡہَا مُعۡرِضِیۡنَ ﴿۴۶
46 : আর যখনই তাদের রবের আয়াতসমূহের কোন আয়াত তাদের কাছে আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُمۡ اَنۡفِقُوۡا مِمَّا رَزَقَکُمُ اللّٰہُ ۙ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنُطۡعِمُ مَنۡ لَّوۡ یَشَآءُ اللّٰہُ اَطۡعَمَہٗۤ ٭ۖ اِنۡ اَنۡتُمۡ اِلَّا فِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ٤٧}
47 : আর যখন তাদেরকে বলা হয়, 'আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করো তখন কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, 'যাকে আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে খাওয়াতে পারতেন আমরা কি তাকে খাওয়াব ? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ ।
وَ یَقُوۡلُوۡنَ مَتٰی ہٰذَا الۡوَعۡدُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ
٤٨}
48 : আর তারা বলে, "তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এ প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে ?"
مَا یَنۡظُرُوۡنَ اِلَّا صَیۡحَۃً وَّاحِدَۃً تَاۡخُذُہُمۡ وَ ہُمۡ یَخِصِّمُوۡنَ ﴿۴۹
59 : তারা তো অপেক্ষায় আছে এক বিকট শব্দের, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের বাক-বিতণ্ডাকালে
فَلَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ تَوۡصِیَۃً وَّ لَاۤ اِلٰۤی اَہۡلِہِمۡ یَرۡجِعُوۡنَ ﴿۵۰
50 : তখন তারা ওসিয়াত করতে সমর্থ হবে না এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরেও আসতে পারবে না ।
এভাবেই মহান আল্লাহ পাক বিজ্ঞানের কথা ব্যক্ত করে পরকালের কথা বুঝিয়েছেন ।
___________________
0 মন্তব্যসমূহ