আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা সম্পর্কে সেরা তথ্য

এটা একটি কাল্পনিক তারিখ
 রেখা । পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন স্থানীয় সময় হয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, স্থানীয় সময় গুলির মধ্যে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় সময়ের পার্থক্য কথা ছেড়ে সম্পূর্ণ গাণিতিক ভাবে একটি সময়কে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রকাশ করার সময় এই রেখাটির বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই । 1884 সালে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ( International Date Line  ) সংঘটিত হয় ।

    Requirements of International Date Line
     Requirements of International Date Line


     আমাদের পৃথিবী গোলাকার তাই পৃথিবীকে একপাক দিলে একদিন সময় কম বা বেশি হয় । একজন ব্যক্তি পৃথিবীকে পশ্চিম দিকের পরিক্রমা করলে একদিন কমে যায় এবং পৃথিবীকে পূর্ব দিকে পরিক্রমা করলে একদিন বেড়ে  যায় । এই একই স্থানের দুটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের পার্থক্যকে দূর করার জন্য আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ব্যবহার করা হয় । এই বিষয়টি এখন উদাহরণ সহযোগে দেখা যাক । বাংলাদেশ ভারতের পূর্বে অবস্থিত । বাংলাদেশের প্রমাণ সময় ( BST ) ধরা হয়েছে ঢাকার ওপর 90°  পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা কে ।  অপরদিকে ভারতের স্টান্ডার্ড টাইম ( IST )   ধরা হয়ে থাকে এলাহাবাদের 82.5 ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমা রেখাকে । 
    [ উল্লেখ্য সারা পৃথিবীর প্রমাণ সময় ( GMT ) গ্রিনিচ মানমন্দিরের ওপর দিয়ে যাওয়া  0° দ্রাঘিমা রেখাকে ধরা হয় । ] 90° ও 82.5° এই উভয় দ্রাঘিমারেখার মধ্যকার পার্থক্য 7.5° অতএব উভয় দেশের মধ্যকার প্রমাণ সময়ের পার্থক্য
    7.5 × 4 = 30 মিনিট । এখন একজন ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমে ইন্ডিয়া এলে সময় বিয়োগ হবে আধঘন্টা ।  এখন অপর একজন ব্যক্তি যদি বাংলাদেশ থেকে পূর্বে ইন্ডিয়াতে এলে সময় যোগ হবে সাড়ে তেইশ ঘন্টা । অর্থাৎ এই ব্যক্তি দুটির মধ্যকার মোট সময়ের পার্থক্য ঘটবে 24 ঘন্টা । এখন এই দুই ব্যক্তি যদি রবিবার সকাল 8-30 বাংলাদেশ থেকে যাত্রা করে 24 ঘন্টা বা একদিন পর ইন্ডিয়াতে এসে পৌঁছায় তাহলে যে ঘটনাটি ঘটবে, প্রথম ব্যক্তির সময় হবে সোমবার সকাল আটটা । এর মূল কারণ 24 ঘন্টা আসতে লেগেছে আর আধঘন্টা বিয়োগ হয়েছে । অপরদিকে দ্বিতীয় ব্যক্তি যে পূর্ব দিক দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল সে এসে পৌঁছাবে মঙ্গলবার সকাল আটটায় । এর মূল কারণ 24 ঘন্টা আসতে লেগেছে এবং সাড়ে তেইশ ঘন্টা যুক্ত হয়েছে । এখন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এই দুই ব্যক্তির মধ্যকার মোট সময়ের পার্থক্য হচ্ছে 1 একদিন অর্থাৎ 24 ঘন্টা ঘন্টা । পৃথিবীকে  পূর্ণ একটি পরিক্রমা করার জন্য এই পার্থক্যটি হয়ে থাকে । প্রথম ব্যক্তি আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা পার হয়নি তাই তার ক্ষেত্রে একদিন যোগ করা হয়নি ।  দ্বিতীয় ব্যক্তি ইন্টারন্যাশনাল ডেট লাইন পার হয়েছে তাই তার ক্ষেত্রে সময় একদিন বিয়োগ করা হয়েছে সময়ের পার্থক্য ঠিক রাখার জন্য । এর ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি এই উভয় ব্যক্তি ভারতে সোমবার সকাল 8 টায় উপস্থিত হয়েছে । এখন আর এই সময়ের পার্থক্যের সমস্যা থাকছে না । এই তারিখ রেখার সাহায্যে সারাবিশ্বের স্থানীয় সময়ের পার্থক্যের সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়েছে । এই  তারিখ বিভাজন রেখার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেলাম যে পৃথিবীর যেকোনো দুটি স্থানের মধ্যে সময়ের পার্থক্য সর্বোচ্চ 24 ঘন্টার বেশি হতে পারে না । এই তারিখ রেখাটি পূর্বদিকে অতিক্রম করলে একদিন বিয়োগ করতে হয় এবং পশ্চিম দিকে অতিক্রম করলে একদিন যোগ করতে হয় । এইভাবে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা টি সারাবিশ্বের সময়ের সামঞ্জস্য রক্ষা করে ।

    এই তারিখ রেখাটি কে কেন বাঁকানো হয়েছে ?


    কোন একটি দেশের সীমারেখার মধ্যে একাধিক প্রমাণ সময় রাখা অসুবিধাজনক ।  তাই এই অসুবিধাকে দূর করার জন্য এই লেখাটিকে বাঁকানো হয়েছে যাতে করে সারা দেশের মধ্যকার প্রমাণ সময় একই থাকে ।

    যেভাবে গঠিত হবে  আন্তর্জাতিক আরবী তারিখ রেখা (International Arabic Date Line )


    বর্তমানে এই তারিখ রেখা গঠিত করা আরো অনেক সোজা । আমরা দ্রাঘিমারেখা জানি । আরবি তারিখ রেখা শুরু হয় প্রতি চন্দ্রমাসে,  নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে ।  পৃথিবীর যে জায়গায় প্রথম চাঁদ দেখা যাবে ওই দ্রাঘিমা রেখাটি হচ্ছে আরবি তারিখ রেখা । ওই দ্রাঘিমারেখার পশ্চিমের যত দেশ থাকবে তাদের নতুন তারিখ হতে শুরু করবে । এইভাবে সারা পৃথিবীতে এক চন্দ্র দিন অর্থাৎ 24 ঘন্টা 50  মিনিট এর মধ্যে নতুন আরবী তারিখ শুরু হয়ে যাবে । এইভাবে আরবি তারিখ যে দু তিন দিন ধরে শুরু হতে থাকে সেটা সমাপ্ত হবে । এই পদ্ধতিতে সারা পৃথিবীতে নতুন চাঁদ দেখার পর আগামী 24 ঘন্টার মধ্যে ঈদ উৎসব পালিত হবে । এইভাবে নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে আরবী তারিখ রেখা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব । এটা সম্পূর্ণ কোরআন, হাদিস, বিজ্ঞান তথা গণিত সম্মত ।

    আন্তর্জাতিক আরবী তারিখ রেখা প্রতিষ্ঠিত হলে সারাবিশ্বে ঈদ হবে একই দিনে


    বর্তমান যুগ হল ইন্টারনেটের
     যুগ । আমরা পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে সর্বপ্রথম চাঁদ দেখার খবর অতি সহজে জানতে পারি, অতি অল্প সময়ের মধ্যে । পৃথিবীর যে দ্রাঘিমা রেখার উপর সর্বপ্রথম চাঁদ দেখা যাবে ওই স্থানটি হবে ওই মাসের আন্তর্জাতিক আরবী তারিখ রেখা । এখন এই রেখার পশ্চিমে অবস্থিত দেশগুলি চাঁদ দেখার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে অর্থাৎ তাদের সন্ধ্যার সময় হবে এরপরে সুতরাং ওই দেশগুলির চাঁদ দেখে নিশ্চিত হবে গাণিতিকভাবে । অর্থাৎ বাংলাদেশের যদি সর্বপ্রথম পৃথিবীর চাঁদ দেখা যায় তাহলে তার পশ্চিমে ভারতের চাঁদ দেখা নিশ্চিত । বাংলাদেশ চাঁদ দেখবে আর ভারত চাঁদ দেখবে না এটা তখনই সম্ভব যখন সারা ভারতজুড়ে মেঘলা আবহাওয়া থাকবে এবং বাংলাদেশের আকাশ পরিষ্কার থাকবে । অন্যথায় গণিত, বিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা কখনোই সম্ভব নয় যে বাংলাদেশ চাঁদ দেখবে আর ভারতে চাঁদ দেখা যাবে না কিংবা বাংলাদেশ চাঁদ দেখবে আর সৌদি আরবে চাঁদ দেখবে না এটা হতে পারে না । সুতরাং আমরা এটা সহজেই বলতে পারি পৃথিবী কোন জায়গায় যদি সর্বপ্রথম চাঁদ দেখা যায় তবে তার পশ্চিমের সকল দেশে চাঁদ দেখা হয়ে যাবে এবং ওই দ্রাঘিমারেখার পূর্বের দেশগুলি পরদিন চাঁদ দেখবে এবং ঈদ উৎসব পালন করবে । এইভাবে সারা পৃথিবীর লোক নতুন চাঁদ  24 ঘন্টা 50 মিনিটের মধ্যে দেখা সম্পন্ন করবে । এর পরেও যদি চাঁদ দেখা না চায় তাহলে আমাদের বুঝতে হবে যে দ্বিতীয় দিন 48 ঘণ্টার পরে যে চাঁদ দেখা যাবে সেটা দ্বিতীয় দিনে চাঁদ কিংবা পৃথিবীর এমন জায়গা রয়েছে যেটা অতিরিক্ত উত্তর  বা দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত তাই চাঁদ দেখা যায়নি সুতরাং এখানে তাদের নিকটবর্তী দেশের সহায়তা নিতে হবে । তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ভারতের চাঁদ দেখা যাবে কিন্তু ঐদিন বাংলাদেশের চাঁদ দেখা নাও যেতে পারে কারণ বাংলাদেশ ভারতের পূর্বে অবস্থান করছে । এইভাবে সারাবিশ্বে 24 ঘন্টার মধ্যে ঈদ উৎসব পালন করা সম্ভব সম্পূর্ণ কোরআন হাদিস এবং বিজ্ঞান সম্মতভাবে ।

     আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ও আরবি আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার মধ্যে পার্থক্য 


     1. আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাটি হল ধ্রুবক রাশি এবং আরবি আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাটি হল চল রাশি ।
     2. আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক আর আরবি আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাটি সম্পূর্ণ বাস্তব যা চাঁদকে দেখে ধরা হয় ।
      3. আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা টি 180 ডিগ্রি পূর্ব বা পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখায় অবস্থিত । অপরদিকে আরবি তারিখ রেখাটি একটি চলমান তারিখ রেখা এটি যে কোন দ্রাঘিমা রেখায় অবস্থিত হতে পারে হতে পারে ।
     4. আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা দ্বারা সৌর দিন কে বোঝায় আর আন্তর্জাতিক আরবী তারিখ রেখা দ্বারা  আরবি তারিখ কে বোঝাবে ।

    মূল মধ্যরেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ধরা হয়নি কেন ?


     উত্তর :  পৃথিবী গোলাকার সুতরাং সেখানে দিন শুরু হবে সেখানে দিন শেষ হবে । তাই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা মূল মধ্যরেখাকে ধরা উচিত কিন্তু তা বাস্তবে ধরা হয়নি । আন্তর্জাতিক বিভাজন রেখা ধরা হয়েছে 180° দ্রাঘিমা রেখাকে ।
     মূল দ্রাঘিমা রেখাটি পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় এই রেখাটি কে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ধরা হয়নি কারণ একই দেশের মধ্যে দুটো তারিখ ব্যবহার করা খুবই অসুবিধাজনক । এই অসুবিধা দূর করার জন্য এই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা টিকে জলভাগের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । এই জন্যই আমরা 180° দ্রাঘিমা রেখা কে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা হিসেবে ধরেছি ।  এছাড়া এই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার আশেপাশে বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে এই দ্বীপপুঞ্জ গুলি বিভিন্ন দেশের অধীনে বিদ্যমান । সেই জন্য ঐ দেশের স্থানীয় সময় এর মান কে এক রাখার জন্য আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা কে বাঁকানো হয়েছে ।

       FAQ


      কেন আন্তর্জাতিক তারিখ লাইন প্রয়োজন?
    Answer : পৃথিবী ভ্রমণ কালে একদিন সময় বেড়ে যায় বা কমে যায় অর্থাৎ পৃথিবীকে যদি পশ্চিম দিকে ভ্রমণ করা হয় তাহলে একদিন কমে যায় এবং পূর্বদিকে ভ্রমণ করলে একদিন বেড়ে যায় এই অসুবিধাকে দূর করার জন্য আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ঠিক করা হয়েছে । এটা এভাবে ঠিক করা হয় যখন কোন ব্যক্তি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যাবে তখন সে একদিন যোগ করে নেবে । এবং যখন কোন ব্যক্তি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে এই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা অতিক্রম করবে সে একদিন বিয়োগ করে নেবে এভাবে এই সময় ঠিক করা হয় ।
      ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা রেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বলা হয় কেন ?
    Answer  :  পৃথিবী গোলাকার সুতরাং সেখানে দিন শুরু হবে সেখানে দিন শেষ হবে । তাই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা মূল মধ্যরেখাকে ধরা উচিত কিন্তু তা বাস্তবে ধরা হয়নি । আন্তর্জাতিক বিভাজন রেখা ধরা হয়েছে 180° দ্রাঘিমা রেখাকে । মূল দ্রাঘিমা রেখাটি পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় এই রেখাটি কে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ধরা হয়নি কারণ একই দেশের মধ্যে দুটো তারিখ ব্যবহার করা খুবই অসুবিধাজনক । এই অসুবিধা দূর করার জন্য এই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা টিকে জলভাগের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । এই জন্যই আমরা 180° দ্রাঘিমা রেখা কে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা হিসেবে ধরেছি ।  এছাড়া এই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার আশেপাশে বেশকিছু দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে এই দ্বীপপুঞ্জ গুলি বিভিন্ন দেশের অধীনে বিদ্যমান । সেই জন্য ঐ দেশের স্থানীয় সময় এর মান কে এক রাখার জন্য আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা কে বাঁকানো হয়েছে ।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ